মাইক্রোসফট এক্সেল এর পরিচিতি ও প্রয়োজনীয়তা
“বেসিক মাইক্রোসফট এক্সেল” টিউনের প্রথম পর্বে। আমার জন্য দোয়া করবেন এবং শেষ পর্ব পর্যন্ত আমি যেন আপনাদের পাশে থাকতে পারি। এবং এটা যেহেতু আমার প্রথম টিউন তাই ভুল হলে ক্ষামার দৃষ্টিতে দেখবেন।
মাইক্রোসফট এক্সেল এর পরিচিতিঃ
মাইক্রোসফট এক্সেল সম্পর্কে মোটামুটি আমরা সবাই জানি। আজকে আমি মাইক্রোসফট এক্সেলের ধারাবাহিক পর্বের ১ম পর্ব আপনাদের সাথে শেয়ার করব। তাহলে আর কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক, মাইক্রোসফট এক্সেল বিশ্ব বিখ্যাত মাইক্রোসফট কর্পোরেশন এর তৈরিকৃত একটি স্পেটশীট বা ওয়ার্কশীট । একে আমরা একাউন্টিং ও বলতে পারি | এ স্পেটশীট দ্বারা ব্যাক্তিগত জীবনের সকল হিসাব তৈরি করা এবং যে কোন বাজেট প্রণয়ন এর কাজে ব্যবহার করা হয় । এ স্প্রেডশীড বা ওয়ার্কশীটে ২৫৬ টা কলাম, ৬৫,৫৩৬ টা রো এবং ১৬,৭৭৭,২১৬ টি সেল রয়েছে । এ স্পেটশীট দিয়ে যেসব কাজ করা যায় ।
কলাম হল A,B,AA,AB, আর রো হল ১ থেকে শুরু করে ৬৫,৫৩৬ এবং স্তম্ভের সমন্বয়ে তৈরি হয় এক একটি ঘর (সেল) ।
স্পেটশীট এর কাজঃ
- বাজেট প্রণয়ন , বার্ষিক প্রতিবেদন প্রনয়,বেতন হিসাব তৈরি ,উৎপাদন ব্যবস্থাপনা , ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করা , দৈনন্দিন হিসাব সংরক্ষন ও বিশ্লেষণ , ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় যাবতীয় হিসাব (সুদ কষা) বিষয়ক বিশ্লেষণ , বৈজ্ঞানিক ক্যালকুলেশন ,তথ্যকে আকর্ষণীয় করে উপস্থাপনার জন্য বিভিন্ন ধরনের চার্ট বা গ্রাফ তৈরী করা ,সব ধরনের আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও সব ধরনের পরিসংখ্যান । এ ছাড়াও আরও অনেক মার্কশীট ও অনেক ডাটাবেসের কার্যাবলী সম্পাদন করা যায় ।
মাইক্রোসফট এক্সেলের ফর্মূলা বা সূত্র
আজকে আমরা জানব মাইক্রোসফট মাইক্রোসফট এক্সেলের মাধ্যমে কিভাবে যোগ, বিয়গ, গুনন, ভাগ, গড়, পার্সেন্টিজ, সর্বোচ্চ সংখ্যা, সর্বনিম্ন সংখ্যা বের করা যায়। তাহলে চলুন দেখা যাক:-
যোগের সূত্রঃ
দুটি সেল পাশাপাশি থাকলে তা নিন্মের পদ্ধতি অনুসারে যোগটি করতে হবে। যেই সেলে যোগফল নামানো হবে সেই সেলে কারসার পয়েন্টার রেখে সুত্র প্রয়োগ করতে হবে।
সুত্রঃ =(a1+b1) এন্টার কী প্রেস করতে হবে।
দুই বা ততোধিক সংখ্যা নিচে নিচে থাকলে নিম্নের সূত্রের সাহায্যে যোগটি করা হবে, যেই সেলে যোগফল নামানো হবে সেই সেলে কারসার পয়েন্টার রেখে সুত্র প্রয়োগ করতে হবে।
সুত্রঃ =sum(a1:e1) এন্টার কী প্রেস করতে হবে
বিয়োগঃ
দুটি সংখ্যার মধ্যে বিয়োগ করতে হলে নিম্নের সূত্রের সাহায্যে বিয়োগ করতে হবে-
সুত্রঃ =a1-b1 তারপর এন্টার কী প্রেস করতে হবে।
গুননঃ
দুটি সংখ্যার মধ্যে গুন করতে হলে নিম্নের সূত্রের সাহায্যে গুন করতে হবে-
সুত্রঃ =a1*b1 তারপর এন্টার কী প্রেস করতে হবে।
ভাগঃ
দুটি সংখ্যার মধ্যে ভাগ করতে হলে, নিম্নের সূত্রের সাহায্যে ভাগ করতে হবে-
সুত্রঃ =a1/b1 তারপর এন্টার কী প্রেস করতে হবে।
এভারেজঃ
দুটি সংখ্যার মধ্যে আভারেজ করতে হলে নিম্নের সূত্রের সাহায্যে আভারেজ করতে হবে-
সুত্রঃ = average(a1:e1) তারপর এন্টার কী প্রেস করতে হবে।
পার্সেন্টিজঃ
ধরি আমরা ৫০০০ টাকার ১০% কত হয় তা বের করব, তাহলে নিম্নের সূত্রের সাহায্যে পার্সেন্টিজটি নির্ণয় করব।
সুত্রঃ =a1*10% তারপর এন্টার কী প্রেস করতে হবে।
সর্বোচ্চ সংখ্যাঃ
কয়েকটি সংখ্যার মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যা করতে হলে নিম্নের সূত্রের সাহায্যে সর্বোচ্চ সংখ্যা বের করতে হবে-
সুত্রঃ =max(a1:e5) তারপর এন্টার কী প্রেস করতে হবে।
সর্বনিম্ন সংখ্যাঃ
কয়েকটি সংখ্যার মধ্যে সর্বনিম্ন সংখ্যা করতে হলে নিম্নের সূত্রের সাহায্যে সর্বনিম্ন সংখ্যা বের করতে হবে-
সুত্রঃ =min(a1:e5) তারপর এন্টার কী প্রেস করতে হবে।
মাইক্রোসফট এক্সেলে একজন বিক্রয়কর্মীর কমিশন নির্ণয় করা হয় যেভাবে
আমরা জানব কিভাবে মাইক্রোসফট এক্সেলের সাহায্যে বিক্রয়কর্মীর কমিশন নির্ণয় করা যায়। এ জন্য প্রথমে নিচের মত করে ক্রমিক নং, বিক্রয় প্রতিনিধির নাম, বিক্রয়ের পরিমান লিখতে হবে।
তারপর কমিশন নির্ণয়ের জন্য সূত্র প্রয়োগ করতে হবে। এখানে উদাহারনস্বরূপ বলা হয়েছে যে যদি বিক্রয়কর্মী যদি প্রতিদিন ২০ হাজার বা তার কম বিক্রয় করলে সে পাবে ২% যদি ২০ হাজার বা তার বেশি বিক্রয় করলে সে পাবে ৩% আর যদি ৩০ হাজার বা তার বেশি বিক্রয় করলে সে পাবে ৪% করে। এখন আমাদের d2 সেলে সুত্র প্রয়োগ করতে হবে।
সুত্রঃ =IF(C2<=20000,C2*2%,IF(C2>=20000,C2*3%,IF(C2>=30000,C2*4%)))
এবং সেখানে বা d2 সেলে তার কমিশন কত তা আসবে, তারপর তা কপি করে সকল বিক্রয়কর্মীর কমিশনের সেলে পেস্ট করলে সকলের কমিশন বের হয়ে আসবে।
মাইক্রোসফট এক্সেলে শ্রমিকের মজুরি নির্ণয় করা হয় কিভাবে ?
মনে করি একটি কোম্পানী শ্রমিকের মজুরী প্রদান করে । প্রতিদিন ৮ ঘণ্টা বা তার কম সময়ের জন্য সে পাবে ২৫ টাকা এবং ৮ ঘণ্টার অতিরিক্ত (ওভার টাইম) প্রতি ঘণ্টার জন্য সে পাবে ৩০ টাকা । অর্থাৎ কেউ যদি ১২ ঘণ্টা কাজ করে তাহলে সে পাবে (২৫*৮+৩০*৪)=৩২০ টাকা ।
শ্রমিকের মজুরি নির্ণয়য়ের জন্য প্রথমে যা করতে হবে তা হল শ্রমিকের নাম্বার, নাম, মোট শ্রম ঘণ্টা লিখে ওভার টাইম এর সেলে বা d2 সেলে কারসর পয়েন্টার রেখে এর সূত্র প্রয়োগ করলে Over Time কত ঘণ্টা তা বের হবে, তারপর এটা কপি করে সকল Over Time এর সেলে pest করলে সকল শ্রমিকের Over Time বের হয়ে আসবে । সূত্রটি হলঃ
সূত্রঃ =IF(C2>8,C2-8,0)
তারপর শ্রমিকের মোট মজুরি বা টোটাল টাকা বের করার জন্য টোটাল টাকা বা d2 সেলে কারসর পয়েন্টার রেখে Total Takar সূত্রটি প্রয়োগ করলে Total Taka বের হয়ে আসবে তারপর এটা কপি করে সকল টাকার সেলে pest করলে সকল শ্রমিকের Total টাকা বের হয়ে আসবে । সূত্রটি হলঃ
সূত্রঃ =IF(C2>0,D2*30+8*25,C2*25)
মাইক্রোসফট এক্সেলে ব্যংক সুদ বের করা হয় কিভাবে ?
আমরা দেখব মাইক্রোসফট এক্সেলে ব্যংক সুদ বের করা যায় কিভাবে, তা নিয়ে আলোচনা করব।
মাইক্রোসফট এক্সেলে ব্যংক সুদ দুইভাবে বের করা যায় একটি হচ্ছে সাধারন সুদ অন্যটি হচ্ছে চক্রবৃদ্ধির সুদ, আজকে আপনাদেরকে দুইভাবেই দেখাব তবে চলুন শুরু করা যাক-
সাধারন সুদঃ
সাধারন ভাবে ব্যাংক সুদ বের করার জন্য প্রথমে একাউন্ট নাম্বার, নাম, টাকার পরিমান, সুদ কি হার এবং কত বছরের জন্য তা লিখতে হবে। তারপর F2 সেলে সূত্র প্রয়োগ করতে হবে। সূত্র প্রয়োগ করলেই ব্যাংক সুদ বের হয়ে যাবে।
সুত্রঃ =a2*b2*c2
এখানে F2 সেলে নির্দিষ্ট বছরের জন্য কত সুদ হবে তা বের হবে, তা কপি করে সকল সুদের সেলে পেস্ট করলে সকলের সুদ বের হবে।
চক্রবৃদ্ধির সুদঃ
চক্রবৃদ্ধির সুদের জন্যও একইভাবে সবকিছু লিখে B4 সেলে কারসার রেখে সেলে সূত্র প্রয়োগ করতে হবে।
সুত্রঃ =B1*(1+B2)^B3-B1
এখানে B4 সেলে নির্দিষ্ট বছরের জন্য কত সুদ হবে তা বের হয়ে যাবে । এভাবেই আমরা নাম, টাকার পরিমান, সুদ কি হার এবং কত বছরের জন্য হবে তা পরিবর্তন করে ব্যাংক সুদ বের করার চেষ্টা করব।
মাইক্রোসফট এক্সেলে বিদ্যুৎ বিল তৈরি করা হয় কিভাবে ?
মাইক্রোসফট এক্সেলে বিদ্যুৎ বিল তৈরি করার জন্য প্রথমে যে কাজটি করতে হবে তা হল মাইক্রোসফট এক্সেল ওপেন করতে হবে। তারপর যথাক্রমে মিটার নং, গ্রাহকের নাম এবং ব্যবহার ইউনিটের পরিমান কত তা লিখতে হবে। তারপর নিচের নিয়ম অনুসারে কাজ করতে হবে।
তারপর যেখানে বিদ্যুৎ বিল বের হবে অথবা টোটাল টাকার সেলে কারসার পয়েন্টার রেখে সুত্র প্রয়োগ করতে হবে। সুত্র প্রয়োগ করলেই টোটাল টাকা বের হয়ে আসবে।
সূত্রঃ=IF(C2<=200,C2*2,IF(C2<=300,C2*2.5,IF(C2<=400,C2*3,IF(C2<=500,C2*3.5,IF(C2>=500,C2*4)))))
টিউনটি পরার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। এভাবেই আমরা মাইক্রোসফট এক্সেল এর মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিল তৈরি করতে পারি। পরবর্তী টিউটোরিয়াল পড়ার জন্য আমন্ত্রন রইল।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন